Lakshmikanta Manna:
”’হরিদাস পাল”’ হল ‘পাল’ উপাধির একটি বাঙালি হিন্দু ব্যক্তির নাম। কথিত আছে, এই নামের ব্যক্তি একসময় বাংলায় ধনী, মহানুভব এবং উচ্চ মহিমায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। বিপুল বিত্তশালী হয়েও সৎ ও দয়াবান ব্যক্তি হিসাবে মহৎ চিন্তাভাবনা ও কর্মের জন্য সমাজে অত্যন্ত সমাদর ও গরিমা অর্জনকারী ব্যক্তিকে হরিদাস পাল উল্লেখ করা হত।<ref name=”toi080520142″>{{cite news|url=http://epaper.timesofindia.com/Repository/getFiles.asp?Style=OliveXLib:LowLevelEntityToPrint_TOINEW&Type=text/html&Locale=english-skin-custom&Path=TOIKM/2014/05/08&ID=Ar00300|title=Who are you to drive people out of Bengal, Didi asks Modi|date=8 May 2014|work=The Times of India|accessdate=9 July 2016|archive-url=https://web.archive.org/web/20170211184134/http://epaper.timesofindia.com/Repository/getFiles.asp?Style=OliveXLib%3ALowLevelEntityToPrint_TOINEW&Type=text%2Fhtml&Locale=english-skin-custom&Path=TOIKM%2F2014%2F05%2F08&ID=Ar00300|archive-date=11 February 2017|url-status=dead}}</ref>
বর্তমানে বাংলা ভাষায় নামটি বহুল প্রচলিত ‘প্রবাদ কথন’। কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করতে, ঈর্ষা বশত হেয় প্রতিপন্ন করতে, বস্তুতপক্ষে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সঙ্গে অবজ্ঞাসূচক বাক্যবন্ধে শ্লেষাত্মক ধ্বনিতে ব্যক্ত করতে প্রয়োগ হয় এভাবে – “তুমি কোন হরিদাস পাল হে ?” কিংবা দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করতে- “কে তুমি হরিদাস পাল?” নামক এক সম্মোধনে। এর মধ্যে সামনের ব্যক্তিকে তুচ্ছ করলেও, কিন্তু সর্বজন শ্রদ্ধেয় সেই “হরিদাস পাল” কে তার অসামান্য ক্ষমতার প্রতি অলক্ষ্যে প্রকৃতপক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনই করা হয়। <ref name=”tt261120032″>{{cite news|url=http://www.telegraphindia.com/1031126/asp/calcutta/story_2613980.asp|title=He’s 102 and he’s called Haridas Pal|date=26 November 2003|work=The Telegraph|accessdate=9 July 2016}}</ref><ref>{{cite news|url=http://indianexpress.com/article/opinion/editorials/haridas-pals-moment/|title=Haridas Pal’s moment|date=9 May 2014|work=The Indian Express|accessdate=9 July 2016}}</ref> বাংলায় গত পাঁচ-ছয় দশক ধরে কোন মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অযোগ্য ও তুচ্ছ করতে দ্বিধাহীনভাবে বাঙালি ব্যবহার করছে “হরিদাস পাল ” নামটিকে। আর ঠিক সেকারণে পাল উপাধিধারী কোন পরিবারে নবজাতকের নাম “হরিদাস” রাখাই হয় না। <ref name=”tt261120032″ />
== উৎপত্তি ==
একটি সূত্রে কথিত আছে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দ অবিভক্ত বাংলায় বর্তমানে [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গের]] [[রিষড়া, হুগলী|রিষড়ার]] এক অতি দরিদ্র গন্ধবণিক পরিবারে জন্ম হয় হরিদাস পালের। তার পিতা ছিলেন নিতাইচরণ পাল। <ref name=”ie090520142″>{{cite news|url=http://indianexpress.com/article/india/politics/in-search-of-haridas-pal/|title=In search of Haridas Pal|last=Bandyopadhyay|first=Sabyasachi|date=9 May 2014|work=The Indian Express|accessdate=9 July 2016}}</ref> পিতার মৃত্যুর পর জীবিকার সন্ধানে হরিদাস ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় আসেন। সেখানে এক সোনার দোকানে সামান্য পারিশ্রমিকে কাজ করতে থাকেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে হরিদাসের কলকাতা নিবাসী একমাত্র ধনী নিঃসন্তান মামার মৃত্যু হলে, তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে মামার সম্পত্তির মালিক হয়ে যান। বড়বাজারে কাঁচ ও লণ্ঠনের ব্যবসা শুরু করেন। অত্যন্ত সৎ ও বুদ্ধিমান হরিদাস নিজের পরিশ্রমে কিছুদিনের মধ্যে ব্যবসা কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলেন এবং বিশ শতকের প্রথমার্ধে তার কলকাতার ব্যবসা গৌহাটি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। তিনি প্রসাদোপম চারটি ভবন কেনেন। হরিদাস পাল ছিলেন অত্যন্ত সৎ, দয়ালু, উদার, সহানুভূতিশীল একজন ব্যক্তি। বিপুল অর্থ ও বিত্তের অধিকারী হয়েও দরিদ্র ও অভাবী এবং সাধারণ মানুষের জন্য একাধিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান, ট্রাস্ট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিপুল অর্থ ও বিত্ত হরিদাসকে যেমন কলকাতার বাবু সমাজে স্থান করে দেয়, তার উদার মনোভাব, মার্জিত ব্যবহার, পরোপকারে দান-ধ্যান ইত্যাদির কল্যাণমূলক কাজ তাকে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের আসনে বসায়।<ref name=”ie090520142″ />
১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে হরিদাস কিডনির অসুখে মারা যান।১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা কর্পোরেশন তাঁর সম্মানার্থে কলেজ লেনের নাম পরিবর্তন করে “হরিদাস পাল লেন” রাখে। <ref name=”ie090520142″ />
অতিরিক্ত দান খয়রাত করে তার সমস্ত অর্থ শেষ হয়ে যায় আর অসুখে শরীর নষ্ট হয়। তখন অর্থের প্রয়োজনে তিনি তার এক কর্মচারীর কাছে টাকা ধার করতে যান। তার চেহারা দেখে তিনি তাকে চিনতে পারেন নি এবং বলেন – তুমি কোন হরিদাস পাল হে, যে তোমাকে টাকা চাইলে দিতে হবে? <ref name=”K24″>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|শিরোনাম=শুধু কথার কথা নয়, কে ছিলেন হরিদাস পাল|ইউআরএল=https://ekolkata24.com/offbeat-news/haridas-pal-not-just-words-who-was-haridas-pal/|সংগ্রহের-তারিখ=২০২২-০৯-১৫}}</ref>
অন্য আরেকটি মতে, হরিদাস পাল ছিলেন ঊনিশ শতকের বাংলারই অধুনা [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] এক হরিপুর গ্রামের এক বাসিন্দা। কিন্তু তিনি রিষড়ার হরিদাস পালের মত দরিদ্র ছিলেন না। তিনি ছিলেন ধনাঢ্য ব্যক্তি। তার পূর্বপুরুষেরা ইংরাজের মোসাহেবি করে বিত্তশালী হয়েছিলেন। স্ফূর্তি করতে কলকাতায় আসতেন। বিভিন্ন ভাবে টাকা উড়িয়ে ফিরে যেতেন হরিপুর। পূর্বপুরুষের বদগুণ নিয়ে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় আসেন। প্রচুর ধন সম্পত্তি যেমন করেন, তেমনই দুহাতে অর্থ বিলিয়ে প্রভাবশালী হন। ভোগবিলাস আর দান খয়রাতিতে তার সমস্ত ব্যবসা ও সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান তিনি। সুনাম আর সম্মান হারিয়ে ফেলেন প্রভাবশালী হরিপুরের হরিদাস পাল। নানান অসুখে শরীর ও স্বাস্থ্য নষ্ট হয়। সাহায্য পাওয়ার আশায় গিয়েছিলেন এক প্রাক্তন কর্মচারীর কাছে। কিন্তু সুনাম হারানো ও নিঃস্ব প্রাক্তন মালিকের কথা পাত্তাই দেননি সেই কর্মচারী। বিস্মিত হরিদাস পাল বলেছিলেন, “এক সময় তুমি আমার কথা শুনতে।” কর্মচারীটি বিরক্ত হয়ে বলেন,“তুমি কোন হরিদাস পাল, যে তোমার কথা এখনও শুনতে হবে?”<ref name=”TW”>{{ওয়েব উদ্ধৃতি| শিরোনাম = কিংবদন্তি হয়ে যাওয়ার নামটির আড়ালে লুকিয়ে আছেন কোন হরিদাসপাল| ইউআরএল = https://www.thewall.in/magazine/who-was-the-legendary-haridas-pal/| সংগ্রহের-তারিখ=২০২২-০৯-১৫}}</ref> এই ভদ্রলোকের নাম থেকেই প্রবাদের নামটি এসেছে।
== আরো দেখুন ==
* ad hominem
* গড় জো
* ডানিং-ক্রুগার প্রভাব
* শ্রেষ্ঠত্ব কমপ্লেক্স
== তথ্যসূত্র ==
[[বিষয়শ্রেণী:শহুরে কিংবদন্তী]]
[[বিষয়শ্রেণী:বাঙালি হিন্দু]]