মরহুম হাফিজ উদ্দিন আফাই

103.159.130.1: ← নতুন পৃষ্ঠা: ভাটি বাংলার মুকুট বিহীন সম্রাট মরহুম হাফিজ উদ্দিন আফাই ২১ আগষ্ট ১৯৩৯ ইং সালে হবিগঞ্জ জেলায় আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা শরীফ নগর এলাকায় এক স…

ভাটি বাংলার মুকুট বিহীন সম্রাট মরহুম হাফিজ উদ্দিন আফাই ২১ আগষ্ট ১৯৩৯ ইং সালে হবিগঞ্জ জেলায় আজমিরীগঞ্জ পৌরসভা শরীফ নগর এলাকায় এক সম্ত্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বৃহ্ত্তর সিলেট বিভাগসহ ময়মনসিংহ-নেত্রকোণা-ভৈরব জেলায় “ আফাই মিয়া “ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর পিতা নাম মরহুম মিয়াধন মিয়া এবং মাতা নাম মরহুম মোছাম্মদ রাইতুন নেছা। তাঁর পিতা ছিলেন অত্র এলাকার একজন সু-পরিচিত ও পঞ্চায়েত ন্যায় বিচারক এবং তাঁর মাতা ছিলেন আদর্শ সু-গৃহিনী। তাঁরা ছিলেন ৪ ভাই ও ২ বোন, এর মধ্যে তিনি ছিলেন ৫ তম। তাঁর বড় ভাই মরহুম মালুম মিয়া ছিলেন চেয়ারম্যান এবং দ্বিতীয় ভাই মরহুম রফিক আহমেদ পাকিস্তান আমলে আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং-নবীগঞ্জ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য (এম.এল.এ) ছিলেন। মরহুম হাফিজ উদ্দিন আফাই ছোটবেলা থেকে দুরন্তপনা ছিলেন। তিনি আজমিরীগঞ্জে শরিফ নগর প্রাইমারী স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে এ.এ.বি.সি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। লেখা পড়ায় বেশি অগ্রসর না হতে পারলেও সামাজিক শিক্ষা তাঁকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে। তাঁর ২ স্ত্রী, ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। তিনি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জরিত ছিলেন। রাজনীতি পরিবারে বড় হয়ে তিনি নিজে রাজনীতির শুরু করেন মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ পাটি (ন্যাপ) নেতৃত্বাধীন থেকে, দেশের রাজনৈতির কারণে সময়ের প্রেক্ষাপটে প্রথমে জাতীয় পার্টি পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের ছিলেন। ১৯৯৬ ইং সালের তাঁকে কেন্দ্রীয় থেকে হঠ্যাৎ আমন্ত্রণ জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি দায়িত্ব দেয় পরবর্তীতে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। তিনি কখনো রাজনীতিতে কোন ধরনের পদবী লাগাতে ইচ্ছুুক ছিলেনা। নিজের হাতে তৈরি করছেন অনেক ব্যবসায়ী, নেতা, এমপি ও মন্ত্রী। তাঁর প্রচেষ্টার কারণে বর্তমান দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ ইং সালে, সাবেক রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ আজমিরীগঞ্জে এসেছিল। তাঁর জীবদ্দশায় এক কাপ চায়ের মূল্য ছিল ৮০.০১০/= টাকা।

তাঁর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক কর্মকান্ডের কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
১. আজমিরীগঞ্জ ফিস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিদেশে চিংড়ি মাছ রপ্তানি হত। এশিয়া মধ্যে সুনাম অর্জন করায় সেই সময়ের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ ইন্ডাস্ট্রিতে এসে পরির্দশন করে গিয়ে ছিলেন।
২. ১৯৭৭, ১৯৮০ ও ১৯৮৩ ইং সালে এক টানা তিন বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই সময়ের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি তাঁকে সরকারের পক্ষ থেকে পুরষ্কৃত করেন।
৩. ১৯৮৫ ও ১৯৮৯ ইং সালে দুইবার বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৪. স্থানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে তিনি যেমন আলোচিত ছিলেন তেমনি পার্শ্ববর্তী জেলায়-উপজেলায়-পৌরসভা নিজস্ব এমপি ও চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েও আলোচিত ছিলেন।
৫. ১৯৮৫-১৯৯৬ ইং সাল পর্যন্ত খালিয়াজুরী গ্রুপ জলমহালের ইজারাদার ছিলেন।
৬. ভেড়ামোহনা, কোদালিয়া, কুশিয়ারা, ছাইন্দা, বান্ডা জলমহাল, জল কাঠখাল, ধলেশ্বরী প্রভৃতি জলমহালের ও আজমিরীগঞ্জ হাট বাজারের একটানা প্রায় ১৬ বছর ইজারাদার ছিলেন।
৭. আজমিরীগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন।
৮. ভাটি বাংলার বিভিন্ন স্থানে সামাজিক সমস্যা, বড় বড় মার্ডার, এলাকা ভিত্তিক মারামারি সহ বিভিন্ন ধরণের সমস্যা সালিশের মাঝে তিনি একাই সমাধান করতেন, যা অন্য কেউ ধারা সম্ভব হত না।
৯. মাঝে মধ্যে খেলাধুলা, বাউল সঙ্গীত, যাত্রা পালা, নৌকা বাইচের আয়োজন করতেন।
১০. এছাড়াও তাঁর অনেক প্রতিষ্ঠান ও কর্মকান্ড আছে।

ভাটি এলাকায় তাঁর অনেক অবদানের মধ্যে কিছু সংক্ষিপ্ত কিছু বিবরণ :
১. ১৯৭৫ ইং সালে পিতার নামকরণে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় মিয়াধন মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্টা করেন।
২. দু্র্জয় স্মৃতিসৌধ হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্টা করেন।
৩. নেত্রকোনা জেলা খালিয়াজরী ও রানছাপুর এ মসজিদ সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্টা করেন।
৪. কিশোরগঞ্জ জেলা ইটনা উপজেলায় ধনপুরে মসজিদ সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্টা করেন।
৫. আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কওমি মাদ্রাসা সম্পূর্ণ নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্টা করেন।
৬. ১৯৮৬ ইং সালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা থানা পুকুরটি সরকারকে দান করেন।
৭. আজমিরীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে তৈরী করতে অর্থ অনুদান করেন।
৮. এছাড়াও তিনি বিভিন্নস্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রসা, মসজিদ, মন্দির, ঈদ, পূজা ও গরিব অসহায় মেয়েদের বিয়েতে সম্পূর্ণ খরচে প্রভৃতি প্রচুর অর্থ দান করেছেন। তিনি নিজে আয় থেকে মানুষের জন্য ব্যয় দিগুণ করেছেন।

তিনি ৬২ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২২ই সেপ্টেম্বর ২০০১ ইং সালে আজমিরীগঞ্জ মৃত্যুবরণ করেন।

Go to Source


Posted

in

by

Tags: