আবু সুফিয়ান নিলয়: সম্প্রসারণ
”’আবু সুফিয়ান নিলয়”’ <blockquote>এর চোখে স্বাধীন বাংলায় থাকবে, বাক [[স্বাধীনতা]]। কারণ, একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, এর মধ্যে বাক স্বাধীনতা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হতে পারে। মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বলতে, [[চিকিৎসা]] , [[নিরাপত্তা]] , [[খাদ্য]] ও [[শিক্ষা]] কে মনে করলেও বাক স্বাধীনতাকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার উপায় নেই বা সঠিক হবে না। যে দেশ ভাষার জন্ন্য সংগ্রাম করেছে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে সংগ্রামের সূত্রপাত। পাক হানাদার বাহিনী, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করতে চেয়েছিল যা আমরা সবাই জানি। কিন্তু শহীদ সালাম ও শহীদ জব্বার এদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন হাজারো বাঙ্গালী। তাদের একটাই দাবি রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রধান অধিকার হওয়া উচিত বাক স্বাধীনতা।</blockquote>
”’জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ”’ <blockquote>(ক) আইনের দৃষ্টিতে সমতা। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
(খ) ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য করা যাবে না। সরকারী ব্যাখ্যা অনুযাই: (১) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবেন না। (২) রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারীপুরুষের সমান অধিকার লাভ করিবেন।
(৩) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে জনসাধারণের কোন বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোন নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাইবে না।
(৪) নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান-প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
(গ) গ্রেপ্তার ও আটকে রক্ষাকবচ। সরকারী ব্যাখ্যা অনুযাই: (১) গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেপ্তারের কারণ জ্ঞাপন না করিয়া প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তাঁহার মনোনীত আইনজীবীর সহিত পরামর্শের ও তাঁহার দ্বারা আত্মপক্ষ-সমর্থনের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না। (২) গ্রেপ্তারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে গ্রেপ্তারের চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে (গ্রেপ্তারের স্থান হইতে ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আনয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সময় ব্যতিরেকে) হাজির করা হইবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাঁহাকে তদতিরিক্তকাল প্রহরায় আটক রাখা যাইবে না।
(৩) এই অনুচ্ছেদের (১) ও (২) দফার কোন কিছুই সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, (ক) যিনি বর্তমান সময়ের জন্য বিদেশী শত্রু; অথবা (খ) যাঁহাকে নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইনের অধীন গ্রেপ্তার করা হইয়াছে বা আটক করা হইয়াছে। (৪) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইন কোন ব্যক্তিকে ছয় মাসের অধিক কাল আটক রাখিবার ক্ষমতা প্রদান করিবে না যদি সুপ্রীম কোর্টের বিচারক রহিয়াছেন বা ছিলেন কিংবা সুপ্রীম কোর্টের বিচারকপদে নিয়োগলাভের যোগ্যতা রাখেন, এইরূপ দুইজন এবং প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত একজন প্রবীণ কর্মচারীর সমন্বয়ে গঠিত কোন উপদেষ্টা-পর্ষদ্ উক্ত ছয় মাস অতিবাহিত হইবার পূর্বে তাঁহাকে উপস্থিত হইয়া বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগদানের পর রিপোর্ট প্রদান না করিয়া থাকেন যে, পর্ষদের মতে উক্ত ব্যক্তিকে তদতিরিক্ত কাল আটক রাখিবার পর্যাপ্ত কারণ রহিয়াছে। (৫) নিবর্তনমূলক আটকের বিধান-সংবলিত কোন আইনের অধীন প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে আটক করা হইলে আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষ তাঁহাকে যথাসম্ভব শীঘ্র আদেশদানের কারণ জ্ঞাপন করিবেন এবং উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে বক্তব্য-প্রকাশের জন্য তাঁহাকে যত সত্বর সম্ভব সুযোগদান করিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, আদেশদানকারী কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় তথ্যাদি-প্রকাশ জনস্বার্থবিরোধী বলিয়া মনে হইলে অনুরূপ কর্তৃপক্ষ তাহা প্রকাশে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিতে পারিবেন।
(৬) উপদেষ্টা-পর্ষদ কর্তৃক এই অনুচ্ছেদের (৪) দফার অধীন তদন্তের জন্য অনুসরণীয় পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নির্ধারণ করিতে পারিবেন।]
(ঘ) সরকারী নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা। সরকারী ব্যাখ্যা অনুযাই: (১) প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। (২) কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না। (৩) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই- (ক) নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করিতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁহাদের অনুকূলে বিশেষ বিধান-প্রণয়ন করা হইতে, (খ) কোন ধর্মীয় বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে উক্ত ধর্মাবলম্বী বা উপ-সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের জন্য নিয়োগ সংরক্ষণের বিধান-সংবলিত যে কোন আইন কার্যকর করা হইতে, (গ) যে শ্রেণীর কর্মের বিশেষ প্রকৃতির জন্য তাহা নারী বা পুরুষের পক্ষে অনুপযোগী বিবেচিত হয়, সেইরূপ যে কোন শ্রেণীর নিয়োগ বা পদ যথাক্রমে পুরুষ বা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হইতে রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।
(ঙ) আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার। সরকারী ব্যাখ্যা অনুযাই: আইনের আশ্রয়লাভ এবং আইনানুযায়ী ও কেবল আইনানুযায়ী ব্যবহারলাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং বিশেষতঃ আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
(চ) জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার। আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।
(ছ) জবরদস্তিমূলক শ্রম নিষিদ্ধ। সরকারী ব্যাখ্যা অনুযাই: (১) সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হইলে তাহা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে। (২) এই অনুচ্ছেদের কোন কিছুই সেই সকল বাধ্যতামূলক শ্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যেখানে (ক) ফৌজদারী অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তি আইনতঃ দণ্ডভোগ করিতেছেন; অথবা (খ) জনগণের উদ্দেশ্যসাধনকল্পে আইনের দ্বারা তাহা আবশ্যক হইতেছে।
</blockquote>
”’বাংলাদেশের সরকারের স্বরুপ”’ <blockquote>স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার) গঠিত হয় । বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এই রাষ্ট্রে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। আমাদের দেশে সংসদীয় পদ্ধতির এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সকল ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি তাঁকে প্রদত্ত ও তাঁর উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করে থাকেন। সংসদীয় রীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার উপর ন্যস্ত। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকে।</blockquote>
”’বাংলাদেশের সরকারের বিভিন্ন বিভাগ”’ <blockquote>পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকার ব্যবস্থার মতো বাংলাদেশ সরকারের তিনটি বিভাগ আছে ।
সেগুলো হচ্ছে: (১) নির্বাহী বিভাগ (২) আইন বিভাগ ও (৩) বিচার বিভাগ
নিচে এদের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে আমরা জানব ।
নির্বাহী বিভাগ: নির্বাহী বিভাগকে শাসন বিভাগও বলা হয়ে থাকে । এটি মূলত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ নিয়ে গঠিত ।
রাষ্ট্রপতি: রাষ্ট্রপতি হলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোটে নির্বাচিত হন। তাঁর কার্যকাল পাঁচ বছর । রাষ্ট্রপতি পুননির্বাচিত হতে পারেন। তবে একাদিক্রমে হউক বা না হউক কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে কোনো অভিযোগ আনা যায় না । তবে সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর কোনো অভিযোগে জাতীয় সংসদ অভিশংসনের (অপসারণ পদ্ধতি) মাধ্যমে তাঁকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অপসারণ করতে পারে ।
রাষ্ট্রপতি হতে হলে কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক ও কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে । এছাড়া তাঁর জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। যদি কেউ অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হন তাহলে তিনি আর রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না ।</blockquote>
”’রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজ”’ <blockquote>১. রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান । সরকারের সকল শাসনসংক্রান্ত কাজ তাঁর নামে পরিচালিত হয় । তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন । অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের (মহাহিসাব রক্ষক, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির । প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত। তিন বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) প্রধানদের তিনিই নিয়োগ দেন । প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতিত রাষ্ট্রপতি তাঁর সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য পরিচালনা করেন ।
২. রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান করতে, স্থগিত রাখতে ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন । তিনি সংসদে ভাষণ দিতে ও বাণী পাঠাতে পারেন । রাষ্ট্রপতি কিছু আইন প্ৰণয়ন সংক্রান্ত কাজ করেন। সংসদ কর্তৃক গৃহীত কোনো বিলে তিনি সম্মতি দান করলে বা সম্মতি দান করেছেন বলে গন্য হলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। সংসদ ভেঙ্গে যাওয়া অবস্থায় অথবা সংসদ অধিবেশনরত অবস্থায় না থাকলে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারেন।
৩. রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোনো অর্থ বিল সংসদে উত্থাপন করা যায় না । কোনো কারণে সংসদ কোনো ক্ষেত্রে অর্থ মঞ্জুর করতে অসমর্থ হলে রাষ্ট্রপতি ৬০ দিনের জন্য সংশ্লিষ্ট তহবিল হতে অর্থ মঞ্জুর করতে পারেন ।
৪. রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং তাঁর সাথে পরামর্শ করে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের নিয়োগদান করেন । তিনি কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করতে পারেন ।
৫. যুদ্ধ বা অন্য দেশ কর্তৃক আক্রান্ত হলে বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে দেশের নিরাপত্তা বা শান্তি বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হলে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন । তবে এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি প্রয়োজন হয় ।
৬. এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি আরও অনেক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন । দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের খেতাব, পদক ও সম্মাননা প্রদান করতে পারেন । রাষ্ট্রপতির অনুমতি ছাড়া দেশের কোনো নাগরিক অন্য কোনো দেশের দেওয়া উপাধি, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করতে পারে না। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় চুক্তি, দলিল তাঁর নির্দেশে সম্পাদিত হয়। তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী, অন্যান্য মন্ত্রী ও বিচারপতিদের শপথবাক্য পাঠ করান ।</blockquote>
”’ প্রধানমন্ত্রী”’ <blockquote>বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। এ ব্যবস্থায় দেশের সরকার প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের নির্বাহী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যে সংসদ-সদস্য জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতীয়মান তাঁকে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। সংবিধান মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। তবে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয় কিংবা সংসদ ভেঙ্গে দেবার জন্য রাষ্ট্রপতিকে লিখিতভাবে পরামর্শ দান করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে তাঁর মন্ত্রিসভাও ভেঙে যায় । তাই প্রধানমন্ত্রীকে সরকারের স্তম্ভ বলা হয়। তিনি একইসাথে সংসদের নেতা ও সরকারপ্রধান ।</blockquote>
”’প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজ”’ <blockquote>প্রধানমন্ত্রীকে বহুবিধ কাজ সম্পাদন করতে হয় । যেমন –
১. সংবিধান অনুযায়ী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শাসন কার্য পরিচালনা করেন । মন্ত্রিপরিষদের সহযোগিতায় তিনি শাসনসংক্রান্ত সকল দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্য, সাংবিধানিক পদে রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিদেশে রাষ্ট্রদূত ইত্যাদি নিয়োগ দেন ।
২. প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান । তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা নির্ধারণ করেন ও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন । মন্ত্রীদের কাজ তদারক করেন । বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় করেন । সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মন্ত্রীগণ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ও অনুমোদন নিয়ে কাজ করেন । তিনি যেকোনো মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন ।
৩. প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদের একজন সদস্য ও সংসদ নেতা । তিনি সংসদে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন । যেমন- সংসদ অধিবেশনে নির্ধারিত দিনে সংসদ সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব প্রদান করেন, সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচী ও কার্যক্রম তুলে ধরে সংসদে বক্তৃতা প্রদান করেন। এছাড়া তিনি জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত বা ভেঙে দিতে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারেন ।
8. সংসদে আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে কোনো সরকারি বিল উত্থাপনের পূর্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। যদি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদ উক্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন তবেই তা সংসদে বিল আকারে উত্থাপন করা যায় । এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ও পরামর্শে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের (জাতীয়) বাজেট প্রণয়ন ও সংসদে উপস্থাপন করেন । এভাবে তিনি আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকেন ।
৫. পররাষ্ট্র বিষয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন । প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে না । আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন ।
৬. দেশের জরুরি অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া যেকোনো নির্দেশ দিতে পারেন ।
৭. প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থের রক্ষক । জাতীয় স্বার্থে তিনি বিভিন্ন সময়ে বক্তৃতা ও বিবৃতির মাধ্যমে জনগণকে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত করেন ও জনগণের মধ্যে সংহতি রক্ষায় কাজ করেন ।</blockquote>
”’মন্ত্রীপরিষদ”’ <blockquote>সরকার পরিচালনার জন্য দেশে একটি মন্ত্রিপরিষদ আছে । প্রধানমন্ত্রী এর নেতা । তিনি যেরূপ সংখ্যক প্রয়োজন মনে করেন, সেরূপ সংখ্যক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন । মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীগণ সাধারণত সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিযুক্ত হন । সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কিন্তু সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিও মন্ত্রী নিযুক্ত হতে পারেন । তবে তার সংখ্যা মন্ত্রিপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যার এক-দশমাংশের বেশি হবে না । প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করেন। মন্ত্রিসভা যৌথভাবে সংসদের নিকট দায়ী থাকেন। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে বা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে মন্ত্রিসভাও ভেঙে যায় । প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাজের সুবিধার্থে মন্ত্রিসভার যেকোনো মন্ত্রীর দপ্তর পরিবর্তন কিংবা অপসারণ করতে পারেন । আবার যে কোনো মন্ত্রী ইচ্ছে করলে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন।</blockquote>
”’মন্ত্রিপরিষদের ক্ষমতা ও কাজ”’ <blockquote>মন্ত্রীপরিষদ দেশের শাসনসংক্রান্ত সব কাজ পরিচালনা করার ক্ষমতার অধিকারী । দেশের শাসন ব্যবস্থার চারদিকে রয়েছে এর নিয়ন্ত্রণ । এখন আমরা এর ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে জানব ।
১. মন্ত্রিসভার সদস্যগণ রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর কাজে সহায়তা করেন। মন্ত্রীগণ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন । মন্ত্রিসভার ব্যর্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে হয় ।
২. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয় । এ সভায় দেশের শাসনসংক্রান্ত সকল বিষয় (যেমন আইন-শৃংখলা রক্ষা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, বৈদেশিক সম্পর্ক, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, দ্রব্যমূল্য ও খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি) আলোচিত হয় এবং এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ।
৩. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের মধ্যে সমন্বয় করে থাকে ।
৪. আইন প্রণয়ন বা পুরাতন আইন সংশোধনের উদ্দেশ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যগণ নিজ নিজ বিভাগ/ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন অনুযায়ী আইনের খসড়া তৈরি করে অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে বিল আকারে উপস্থাপন করেন ।
৫. প্রতিবছর সরকার দেশ পরিচালনার জন্য বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করে । অর্থমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে খসড়া বাজেট প্রণীত হয় । মন্ত্রিপরিষদের অন্যান্য সদস্যগণ এ বিষয়ে সহযোগিতা করেন । খসড়া বাজেট সংসদে উপস্থাপন করে অনুমোদন করানো মন্ত্রিপরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
৬. দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিভিন্ন বাহিনী গঠন ও পরিচালনায় মন্ত্রিপরিষদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। যেমন- দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনা ও সমন্বয়ের জন্য রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আবার দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি, শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য গঠিত বিভিন্ন বাহিনীসমূহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে ।
৭. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদ বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ করে । বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদন, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনার দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদের। জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা ঠিক রেখে মন্ত্রিপরিষদ এসব কাজ করে ।
৮. মন্ত্রিপরিষদ সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। সরকারের নীতি জনগণের কাছে তুলে ধরে এবং ঐসব নীতির পিছনে জনগণের সমর্থন আদায় করে ।</blockquote>
”’বাংলাদেশের আইনসভা”’ <blockquote>বাংলাদেশের আইনসভা:
গঠন
সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইনসভা অন্যতম । বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। এটি এক কক্ষবিশিষ্ট । জাতীয় সংসদের মোট সদস্যসংখ্যা ৩৫০। এর মধ্যে ৩০০ জন সদস্য জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন এবং অবশিষ্ট ৫০টি আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত । বাংলাদেশকে মোট ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। এ সকল নির্বাচনী এলাকা থেকে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে একজন করে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসন সংখ্যার আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যরা সাধারণ আসনে নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তবে মহিলা সদস্যগণ ইচ্ছা করলে ৩০০ আসনের যে কোনোটিতে সরাসরি প্রতিদ্বন্ধিতার মাধ্যমেও নির্বাচিত হতে পারেন।
সংসদে একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার থাকেন। তাঁরা সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তাঁদের কাজ সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করা। সংসদের কার্যকাল পাঁচ বছর। এর পূর্বেও রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। সংসদের একটি অধিবেশন সম্পন্ন হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে আরেকটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে হয়। মোট সদস্য সংখ্যার মধ্যে কমপক্ষে ৬০ জন উপস্থিত থাকলে কোরাম হয় এবং সংসদ অধিবেশন পরিচালনা করা যায় । প্রধানমন্ত্রী সাধারণত সংসদের নেতা । আসনসংখ্যার দিক দিয়ে নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দলের প্রধান সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংসদের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়। সংসদের অনুমতি ছাড়া একনাগাড়ে ৯০ বৈঠক দিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায় ।
পাঁচ বছর পর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । ন্যূনতম ২৫ বছর বয়সী বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন । তবে কেউ আদালত দ্বারা দেউলিয়া বা অপ্রকৃতিস্থ ঘোষিত হলে বা অন্য রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে বা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কারাদণ্ড ভোগ করলে সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন ।</blockquote>
Go to Source